মামলা-মোকাদ্দমায় জর্জরিত। ভাটা পড়েছে জনপ্রিয়তায়। সে সময় ‘ইন্ডাস্ট্রি উত্তম কুমারকে’ এড়িয়ে চলছেন অনেক পরিচালক। সামনে মুখ খোলার ধৃষ্টতা কারোর নেই, কিন্তু হাবভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছেন অনেকেই। মহানায়ক উত্তম কুমার সে আঁচ যে পাননি এমনটা নয়।
অভিসন্ধি করে অনেক পরিচিত মুখ তাঁকে সাইডলাইন করার চেষ্টা করছে। এটা তিনি ভালভাবেই বুঝতেন। এ দিকে হাসপাতালে ভর্তি সুপ্রিয়া দেবী। তাতে মন আরও ভারাক্রান্ত। তবে, নিয়ম করে চালিয়ে যাচ্ছেন শুটিং। ২৩ জুলাই তেমনই একটি দিন ছিল।
সকাল সকাল স্নান সেরে পূজা-অর্চনা করে বেরোচ্ছেন শুটিংয়ে। তাঁর বেরনোর সময় প্রতিদিন দরজা সামনে দাঁড়িয়ে থাকতেন সুপ্রিয়া দেবী। যতক্ষণ না কর্তার গাড়ির শেষ চিহ্নটুকু মিলিয়ে যাচ্ছে, দরজার সামনে থেকে নড়তেন না। আজ সে দুয়ার শূন্য।
পিছন ফিরে উত্তম তাকিয়ে দেখলেন, তাঁর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে নেই বেণু।
গৌরীর সঙ্গে মন কষাকষির পর এক কাপড়ে এই ময়রা স্ট্রিটের বাড়ির দরজায় যখন বিধ্বস্ত উত্তম দাঁড়ান, দ্বিধাহীন ভাবে আশ্রয় দিয়েছিলেন সুপ্রিয়া। #Copied#UttamKumar
(4/n)
এক স্মৃতিকথায়, উত্তম কুমার বলেছিলেন, ‘সেদিন বিস্ময়-মমতা দুই নিয়ে হাসি মুখে দরজা উন্মুক্ত করে দিয়েছিল বেণু।’ সেই থেকেই সতেরো বছর ধরে এই ময়রা স্ট্রিটে উত্তম রয়েছেন। আজ সেই বেণুর কথা বারবার মনে পড়তে লাগল। ‘আমায় ওর অন্তরের সবটুকু দিয়ে ভালোবাসে," #Copied#UttamKumar
(5/n)
"আমি জানি না, পরলোকের ডাকে সাড়া দিয়ে কে আগে যাবে’ আমি না বেণু!’ এ সব কথা ভাবতে ভাবতেই এগিয়ে গেলেন গাড়ির দিকে।
এমন মুহূর্তে উত্তমের জীবনে আকস্মিক একটি ঘটনা ঘটে গেল। গাড়িতে উঠতে গিয়ে যা দেখলেন, তাতে উত্তম স্তম্ভিত।
তাঁর সঙ্গে ছিলেন প্রযোজক অসীম সরকার।শুটিংয়ে যাওয়ার সময় গাড়িতে যে জিনিসটা 17 বছর ধরে তাঁকে রিলিফ দিয়ে এসেছে, আজ তা উধাও!
বোঝা গেল তাঁর প্রিয় টেপ রেকর্ডারটি চুরি গিয়েছে।
এতটাই বিমর্ষ হয়ে পড়লেন, মনে হলো প্রিয়জন হারানোর থেকেও বেশি আঘাত পেয়েছেন এই টেপ চুরি যাওয়ায়।
(7/n)
মন খারাপের মাঝেও সে দিন ‘ওগো বধূ সুন্দরী’ ছবির ফ্লোর সেটে হাজির হয়েছেন। টেপ রেকর্ডারের চুরি যাওয়াটা কোনওমতে মেনে নিতে পারছিলেন না। খাওয়া-দাওয়াও ঠিকমতো করেননি।
এ দিনই যে তাঁর জীবনের শেষ শুটিং কে বা জানতো! #Copied#UttamKumar
(8/n)
তাঁর শেষ সংলাপ, “আমিও দেখে নেবো, আমার নাম গগন সেন...”। এই সংলাপ বলতে বলতেই অসুস্থ হয়ে পড়েন উত্তম কুমার।
অসুস্থ শরীরে বাড়ি এলেও নিজেকে বিছানায় ফেলে রাখেননি। বন্ধু দেবেশ ঘোষের কথা রাখতে সে দিন রাতে তাঁর বাড়িতে হাজির হন উত্তম কুমার। গাল জুড়ে হাসি #copied#UttamKumar
(9/n)
যন্ত্রণার ছিটে ফোঁটাও নেই সেই মুখে। বেশ কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে মাঝ রাতে যখন বাড়ি ফেরেন, ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। তারপর একেবারে শয্যাশায়ী। একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়।
পাঁচ-পাঁচটা ডাক্তারের নিরলস প্রচেষ্টা সত্ত্বেও পরের দিন অর্থাত্ ২৪ জুলাই রাত ৮টা ৩২ মিনিটে মহানায়ক রিয়েল রঙ্গমঞ্চকে বিদায় জানালেন চিরদিনের জন্য
উত্তমের অসুস্থতা নিয়ে চাপা গুঞ্জন শুরু হয়ে গিয়েছিল টলিউডে। গিরিশ মুখার্জি রোডের বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছিলেন সাংবাদিকরা। #Copied
(11/n)
নার্সিং হোম থেকে সোজা গিরিশ মুখার্জি রোডের বাড়িতেই নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। বেশিক্ষণ চাপা রাখা যায়নি মহানায়কের মৃত্যুর খবর।
২৫ তারিখ ভোর বেলায় সে খবর ছড়িয়ে পড়ল মহানগর ছাড়িয়ে গোটা ভূ-ভারতে। বাঙালির মাথায় যেন বাজ ভেঙে পড়ল। #Copied#UttamKumar
(12/n)
ভক্তদের বাধ ভাঙা আবেগ ভাসিয়ে দিল গোটা মহানগরকে। গুরু গুরু বলে রব তুললেন ভক্তরা।
উত্তমের এভাবে চলে যাওয়ায় পরিচালক সত্যজিত রায় সে দিন বলেছিলেন, “উত্তমের মতো কোনও নায়ক নেই। কেউ হবেও না। আশ্চর্য অভিনয়ের ক্ষমতা। ওর ক্ষমতা আছে দর্শক টেনে রাখার...”
শোকবিহ্বল সুচিত্রা সেনের কথায়, “ও গ্রেট...তবু যেন মনে হয়, ওকে ঠিক মতো আবিষ্কার করা গেল না।” আড়াইশোর বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন উত্তম কুমার। বহুমুখী চরিত্রে নিজেকে ভেঙেছেন, গড়েছেন। #Copied#UttamKumar
(14/n)
নায়ক হিসাবে যখন তাঁর গ্রহণযোগ্যতা চূড়ায়, তখন খলনায়ক কিংবা বাবার চরিত্রে অভিনয় করতে পিছুপা হননি। তাতেও তিনি দারুণভাবে সফল। তবে, কোথাও যেন এক ধারায় বয়েছে তাঁর সেলুলয়েডের জীবন।
পরবর্তীকালে সুচিত্রার মতো সত্যজিতকে উত্তম প্রসঙ্গে বলতে শোনা গিয়েছে, যে দেশে সত্ অভিনেতার সদ্ব্যবহার করতে জানা লোকের এত অভাব, সেখানে এটাই স্বাভাবিক! তাই বলাই যায়, বাঙালির জীবনে ‘মহানায়ক’ হয়েও আজও অনাবিষ্কৃতই থেকে গেলেন উত্তম!